এক অসমাপ্ত প্রেমের গল্প

 

 

এক অসমাপ্ত প্রেমের গল্প: রুহি ও তানভীর



রুহি ছিল এক অতি সাধারণ গ্রামের মেয়ে—সরলতা আর মিষ্টি হাসিতে সবার মন জয় করত। গ্রামের নদী, মাঠ আর বুনো ফুলের গন্ধ ছিল তার প্রিয়। পড়াশোনা করত গ্রামের ছোট্ট স্কুলে। মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজেও সাহায্য করত। তার জীবনের স্বপ্নগুলো ছিল ছোট কিন্তু সুন্দর, আর এভাবেই কাটছিল তার দিনগুলো।

 

অন্যদিকে তানভীর ছিল শহরের আধুনিক ছেলে। সৃজনশীল ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনা করতে করতে গ্রামের মায়াবী প্রকৃতি আর সাধারণ মানুষের জীবন তাকে আকর্ষণ করল। সেই টানেই একদিন সে এলো রুহির গ্রামে। তার ইচ্ছা ছিল গ্রামের প্রতিটি দৃশ্যকে ক্যামেরার মাধ্যমে জীবন্ত করে তুলবে।

একদিন সকালে গ্রাম ঘুরতে ঘুরতে সে চলে গেল গ্রামের পুকুরের ধারে। সেখানেই দেখা হলো রুহির সঙ্গে। রুহির চোখে ছিল কৌতূহল আর অদ্ভুত এক মায়া। তানভীরের চোখের দিকে তাকাতেই যেন রুহি তার সমস্ত পৃথিবীকে ভুলে গেল। আর তানভীর প্রথমবারের মতো অনুভব করল ভালোবাসা কীভাবে মনকে পরিবর্তন করে।

এরপর থেকে তানভীর প্রায় প্রতিদিনই রুহির কাছে আসত। কখনো গ্রামের গল্প শুনত, কখনো তাকে নিয়ে চলত গ্রাম ঘুরতে। একসাথে প্রকৃতির ছবি তুলতে তুলতে তাদের মাঝে জমতে থাকল এক নিবিড় ভালোবাসা। তারা প্রতিজ্ঞা করেছিল যে কোনো বাধা এলেও তারা একসাথে থাকবে, গ্রামের নির্জনতা আর প্রকৃতির নিরিবিলিতে তাদের এই ভালোবাসা যেন এক অদ্ভুত মায়ায় মোড়ানো ছিল।

 

কিন্তু বাস্তবতা তাদের এই স্বপ্নের ভালোবাসাকে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। রুহির পরিবার আর গ্রামের মানুষ তানভীরকে সহজভাবে নেয়নি। গ্রামবাসী মনে করত শহরের ছেলে কখনো গ্রামে থিতু হতে পারবে না, আর রুহির জীবনকে বাঁচাতে পারবে না।

তবুও তারা থেমে যায়নি। তারা স্বপ্ন দেখত শহর আর গ্রামের জীবন একসাথে মিশিয়ে দেওয়ার। তানভীর বারবার বলত রুহিকে নিয়ে শহরে চলে যাবে, সেখানে তারা সুখে সংসার করবে। কিন্তু শহরের কোলাহল আর প্রতিযোগিতার মাঝে রুহির সরল গ্রামীণ জীবন কতটা বাঁচবে, সেটা নিয়ে রুহির মনে ভয় ছিল।

শেষে একদিন তানভীর ফিরে গেল শহরে। তাদের যোগাযোগ তখন সীমাবদ্ধ হয়ে গেল চিঠি আর ফোনে। কিন্তু দূরত্বের এই বাধা, পারিবারিক চাপ আর সমাজের নিয়ম যেন ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে থাকল।

রুহি অপেক্ষা করতে থাকল তানভীরের জন্য, কিন্তু তানভীরের জীবন শহরের জটিলতায় জড়িয়ে গেল। কিছুদিন পর তানভীরের চিঠি আসাও বন্ধ হয়ে গেল। রুহি ধীরে ধীরে বুঝল, এই ভালোবাসা বাস্তবতার কাছে হেরে গেছে। তাদের স্বপ্নগুলো প্রকিয়ার মতো অমর হয়ে থাকবে তার মনে, কিন্তু সেই ভালোবাসা হয়তো কখনো পূর্ণতা পাবে না।

তাদের গল্পটি থেকে গেল অসমাপ্ত, কিন্তু স্মৃতিগুলো থেকে গেল রুহির মনের গভীরে। তাদের ভালোবাসা ছিল চিরন্তন, কিন্তু সময় আর বাস্তবতা তাদের সেই প্রেমকে মেলে ধরতে দেয়নি। রুহি হয়তো আজও সেই নদীর ধারে বসে তানভীরকে খুঁজে, আর তানভীর শহরের কোনো ব্যস্ত মোড়ে দাঁড়িয়ে ভাবে, রুহির সঙ্গে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো হয়তো তার জীবনের সেরা সময়।

 

Post a Comment

0 Comments